ই-পাসপোর্ট সিস্টেম বাংলাদেশ । ই পাসপোর্ট কি। ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

পাসপোর্টঃ পাসপোর্ট হল একটি সরকারী নথি যা একজন ব্যক্তির জাতীয়তা এবং পরিচয় প্রমাণ করে। এটি বিদেশে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয়। পাসপোর্টে ব্যক্তির নাম, জন্ম তারিখ, ছবি, স্বাক্ষর এবং জাতীয়তা থাকে।

পাসপোর্টের উদ্দেশ্য হল একজন ব্যক্তির জাতীয়তা এবং পরিচয় প্রমাণ করা। এটি বিদেশে ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় কারণ এটি একজন ব্যক্তির দেশত্যাগ এবং প্রত্যাবর্তনের অধিকার প্রদান করে। পাসপোর্ট বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের কাছে প্রদর্শন করা হয় এবং এটি একজন ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণের জন্য অনুমতি দেয় কিনা তা নির্ধারণ করতে ব্যবহৃত হয়।

ই-পাসপোর্টঃ ই-পাসপোর্ট হল একটি ইলেকট্রনিক পাসপোর্ট যা একটি চিপ বা ট্র্যান্সপোন্ডার ব্যবহার করে বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করে। এই তথ্যটি পাসপোর্টের মালিকের নাম, জন্ম তারিখ, ছবি এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারে। ই-পাসপোর্টগুলি সাধারণত একটি ঐতিহ্যবাহী পাসপোর্টের মতো দেখায় এবং একইভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে তারা আরও নিরাপদ এবং জাল করা কঠিন।

ই-পাসপোর্ট সিস্টেম বাংলাদেশ । ই পাসপোর্ট কি। ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে

বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট সিস্টেম ২০২০ সালের ২২শে জানুয়ারি চালু হয়। এই সিস্টেমটি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর (ইপার্ড) দ্বারা বাস্তবায়িত হয়। ই-পাসপোর্ট সিস্টেমটি জার্মানির ভিসা টেকনোলজিস (ভিটি) দ্বারা সরবরাহ করা হয়।

পাসপোর্টের জন্য আবেদনের সময় যেসব কাগজপত্র জমা দিতে হয়

  •     জাতীয় পরিচয়পত্র বা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ
  •     পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম
  •     ছবি (পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত আকারের)
  •     স্বাক্ষর (পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত আকারের)
  •     জন্ম সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  •     বিবাহ সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  •     তালাক সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  •     মৃত্যু সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
  •     অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্র (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
ই-পাসপোর্ট

পাসপোর্টের ধরণ ও ফি

পাসপোর্টের বিভিন্ন ধরন রয়েছে

  • সাধারণ পাসপোর্ট হল সবচেয়ে সাধারণ ধরন। এটি ব্যক্তিগত ভ্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • অফিসিয়াল পাসপোর্ট সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
  • ডিপ্লোমেটিক পাসপোর্ট কূটনীতিকদের জন্য ব্যবহৃত হয়।

নিয়মিত বিতরণ: বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ থেকে ১৫ কর্মদিবস বা ২১ দিনের মধ্যে। 

জরুরী বিতরণ: বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ থেকে ৭ কর্মদিবস বা ১০ দিনের মধ্যে। 

অতীব জরুরী বিতরণ: বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্টের তারিখ থেকে ২ কর্মদিবসের মধ্যে। 

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আবেদনের ক্ষেত্রে (১৫% ভ্যাট সহ):

৪৮ পৃষ্ঠা  ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট

নিয়মিত বিতরণ: ৪,০২৫ টাকা

জরুরী বিতরণ: ৬,৩২৫ টাকা 

অতীব জরুরী বিতরণ: ৮,৬২৫ টাকা 

৪৮ পৃষ্ঠা  ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট

নিয়মিত বিতরণ: ৫,৭৫০ টাকা

জরুরী বিতরণ: ৮,০৫০ টাকা

অতীব জরুরী বিতরণ: ১০,৩৫০ টাকা

৬৪ পৃষ্ঠা  ৫ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট

নিয়মিত বিতরণ: ৬,৩২৫ টাকা

জরুরী বিতরণ: ৮,৬২৫ টাকা

অতীব জরুরী বিতরণ: ১২,০৭৫ টাকা

৬৪ পৃষ্ঠা ও ১০ বছর মেয়াদ সহ পাসপোর্ট

নিয়মিত বিতরণ: ৮,০৫০ টাকা

জরুরী বিতরণ: ১০,৩৫০ টাকা

অতীব জরুরী বিতরণ: ১৩,৮০০ টাকা

পাসপোর্টের জন্য আবেদনের পর, আবেদনটি যাচাই করা হয়। আবেদনটি যদি অনুমোদিত হয়, তাহলে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। পাসপোর্ট সাধারণত আবেদনের এক থেকে তিন মাসের মধ্যে ইস্যু করা হয়।

পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময় যে বিষয়গুলি মনে রাখা উচিত

পাসপোর্টের জন্য আবেদন করার সময় কিছু বিষয় মনে রাখা আবশ্যক=

  •     আবেদন ফর্ম সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
  •     প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যথাযথভাবে জমা দিতে হবে।
  •     আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে।

ই-পাসপোর্ট সিস্টেমের সুবিধা

  •     নিরাপত্তা বৃদ্ধি: ই-পাসপোর্টগুলি জাল করা কঠিন, যা ভ্রমণ নিরাপত্তা উন্নত করতে সাহায্য করে।
  •     প্যাসপোর্ট যাচাইকরণ প্রক্রিয়া দ্রুত এবং সহজ: ই-পাসপোর্টগুলিতে একটি ইলেকট্রনিক চিপ থাকে যা পাসপোর্টের মালিকের বায়োমেট্রিক তথ্য সংরক্ষণ করে। এটি পাসপোর্ট যাচাইকরণ প্রক্রিয়াকে দ্রুত এবং সহজ করে তোলে।
  •     স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস: ই-পাসপোর্টগুলি ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমসসে পাসপোর্ট যাচাইকরণ প্রক্রিয়াকে স্বয়ংক্রিয় করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

ই-পাসপোর্ট সিস্টেমের চ্যালেঞ্জগুলি

ই-পাসপোর্ট সিস্টেম বাস্তবায়নের কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে 

  • প্রথমত, এটি ব্যয়বহুল হতে পারে।
  • দ্বিতীয়ত, এটি প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন।
  • তৃতীয়ত, এটি জনসাধারণের সচেতনতা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সরকার ই-পাসপোর্ট সিস্টেমের চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলা করার জন্য কাজ করছে। সরকার ই-পাসপোর্ট সিস্টেমের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করেছে যা ব্যয়-সাশ্রয়ী, প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এবং জনসাধারণের জন্য সহজবোধ্য।

উপসংহার

সরকার ই-পাসপোর্ট সিস্টেমের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা তৈরি করেছে যা ব্যয়-সাশ্রয়ী, প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত এবং জনসাধারণের জন্য সহজবোধ্য। ই-পাসপোর্টগুলি বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমানভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ২০২২ সালে, প্রায় ১৫০টি দেশ ই-পাসপোর্ট ইস্যু করেছে।

Leave a Comment